বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে এদেশের চিত্রশিল্পীগণ
Main Article Content
Abstract
বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী নয়া উপনিবেশবাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতিয়তাবাদী চেতনার চরমতম রূপ। ১৯৭১ সালে প্রায় নয় মাস ব্যাপী এ যুদ্ধ চলে যার পরিসমাপ্তিতে উদ্ভব ঘটে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের। কিন্তু এ যুদ্ধের পটভূমি জুড়ে রয়েছে এক দীর্ঘ সময়কাল যখন পূর্ব পাকিস্তানের জনমানস এক সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় অভিসিক্ত হয়। এ সময়কে বলা যায় বাঙালির স্বাধীকার অন্দোলনের প্রস্তুতিপর্ব যার সূচনা ঘটে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা প্রশ্নে বাঙালি ছাত্র-যুবাদের প্রাণ দানের ভেতর দিয়ে প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের বীজ রোপিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ভাষা-সংস্কৃতি-রাজনীতির সম্মিলিত স্রোত বেয়ে আসে একাত্তর; শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ অবধি সুদীর্ঘ সময়ব্যাপী বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনে অন্যান্য অনেক শ্রেণী-পেশার মানুষের মতো এদেশের চিত্রশিল্পীগণ এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু অন্যান্যদের মতো চিত্রশিল্পীদের ভূমিকার বিষয়টি খুব বেশি আলোচিত হয়নি। বস্তুত বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন ও তার চূড়ান্ত পরিণতি যে মুক্তিযুদ্ধ তার অন্তর্নিহিত শক্তি ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনা। আর বাঙালীর সে চেতনার উদ্বোধনে এক অনন্য ভূমিকা রেখেছেন দেশের চিত্রশিল্পীগণ। ১৯৫২, ১৯৬৯, এবং ১৯৭১-এর রাজনৈতিক আন্দোলনকে এরা তাঁদের সৃজন-কর্মের ভেতর দিয়ে নানাভাবে প্রভাবিত ও বেগবান করেছেন। চিত্রশিল্পীগণ একদিকে যেমন তাঁদের সৃজনীশক্তির বিচিত্র প্রকাশ ঘটিয়েছেন রেখা ও রঙে, তেমনি আবার তাঁদের অনেকেই শারিরীকভাবে প্রত্যক্ষ মিছিল-শোভাযাত্রায় উপস্থিত থেকে বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে চেতনাপুষ্ট করেছেন। কামরুল হাসান, মুস্তাফা মনোয়ার, কালিদাস কর্মকার, বিজন চৌধুরী, বীরেন সোম, প্রাণেশ মন্ডল, মূর্তজা বশীর, শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ চিত্রশিল্পীদের পোষ্টার, ব্যানার, ম্যূরাল, দেয়াল লিখন বাঙালির সংগ্রামী চেতনা ও সংগ্রামকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এ প্রবন্ধে আমি বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে চিত্রশিল্পীদের নানামাত্রিক অবদানের প্রতি আলোকপাত করবার প্রয়াস পেয়েছি। এর ভেতর দিয়ে দুটি বিষয় স্পষ্ট হবে বলে আমার ধারণাঃ প্রথমতÑ মুক্তিযুদ্ধপূর্বকালীন সময়ে চিত্রশিল্পীরা কিভাবে আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনা বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করেছেন, এবং, দ্বিতীয়তÑ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তাঁরা কিভাবে যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নতুন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রূপরেখা তৈরিতে কাজ করেছেন।