জীবনানন্দের সাহিত্যে নিঃসঙ্গতার চেতনা
Main Article Content
Abstract
[সার-সংক্ষেপ: সাহিত্য বা যে কোন শিল্পকর্ম কোন সুনির্দিষ্ট দার্শনিকচেতনা কিংবা কোন বিশেষ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে- এমন কথায় সাহিত্যতাত্ত্বিকদের মধ্যে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেন। জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) কবিতা তথা সাহিত্যের ক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রথাগত ধারা বা সুনির্দিষ্ট মতবাদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া অনুমোদন করেননি। তাঁর নিজের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে অনেক মহল থেকে তত্ত্বহীনতা, দায়বদ্ধতা বা কোন নির্দিষ্ট আদর্শ প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাহীনতার অভিযোগ উত্থাপিত হলেও তিনি এ ব্যাপারে ছিলেন নির্বিকার। কিন্তু তাই বলে তাঁর সাহিত্যকর্মে কোন দার্শনিক চেতনা ছিল না- এমনটি বলা সংগত নয়। যে কোন বড় মাপের কবি বা সাহিত্যিকের মতো তাঁর কবিতা তথা সাহিত্যকর্মেও প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু উঁচুমানের দার্শনিক ভাবনা বা বোধ। এই বোধ বা চেতনার দ্বারা আবশ্যিকভাবে সাহিত্যকর্মকে বেঁধে রাখার তাত্ত্বিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁর সুস্পষ্ট দ্বিমত থাকলেও তিনি নিজেও এর দ্বারা আবদ্ধ ছিলেন। তবে এ ক্ষেত্রে এটা বলা প্রয়োজন যে, এই বোধ বা চেতনা কোন প্রথাগত নিয়ম, মতাদর্শ অন্যের দ্বারা তৈরি কোন বিধান, নিদের্শনা কিংবা এককথায় আমদানিকৃত দার্শনিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক চেতনা নয়। বরং তিনি নিজের একান্ত ভাবনা বা বোধ দ্বারা স্বাধীনভাবে তাঁর সাহিত্যকর্মকে পরিচালিত করেছেন। আর এর মাধ্যমে তিনিও বেশ কিছু দার্শনিক ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। জীবনানন্দের সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে এবং কিছু দার্শনিক প্রবন্ধের দ্বারা তাঁর যেসকল দার্শনিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায় তার মধ্যে নিঃসঙ্গতার চেতনা অন্যতম। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সমকালীন দার্শনিক ভাবনার, বিশেষকরে, অস্তিত্ববাদ, অ্যাবসার্ডইজম, ও বেশ কিছু উত্তরাধুনিক চিন্তায়ও নিঃসঙ্গতার বোধ এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। জীবনানন্দের নিঃসঙ্গতার চেতনা ঐসকল দার্শনিক চেতনার সাথে কতটুকু সম্পর্কিত, বা স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ তা পর্যালোচনা করাই বর্তমান শিরোনামের গবেষণা কর্মের মূল লক্ষ্য। বাঙালির দর্শন-ভাবনার ঐতিহ্য অনুধাবন ও অগ্রগতিতে এই গবেষণা গুরুত্ব বহন করবে বলে আশা পোষণ করছি।]